এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কার্যক্রম মনপুত না হলেও তাদের ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, মনে রাখতে হবে এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সবার ব্যর্থতা। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে নিজেরা যাতে নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হন সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এই মন্তব্য করেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই গণসমাবেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া মাফিয়া সরকার দেশের অর্থনীতিকে শুধু ধ্বংস করেনি, প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে ফেরত আনার সুযোগ এসেছে। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমে ২৭ দফা পরে ৩১ দফা দিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। অনেক রিকশাচালক ভাই গ্রামে থাকতে পারেননি, তারা শহরে চলে এসেছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গণঅভ্যুত্থানে আমাদের সামনে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। আপনারাই হলেন গণতন্ত্রের পাহারাদার বা ভ্যানগার্ড। আবারও যদি কেউ ধ্বংস করতে চায় আপনারা রুখে দাঁড়াবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব এখনো সরকারের প্রশাসনে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা বসে আছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এখনো আমলা-সরকারের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা আছে। তারা এখনো সব ধরণের চেষ্টা করছে ষড়যন্ত্র করছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি প্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। তিনি চিকিৎসা শেষে আবার দেশে ফিরে আসবেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা নানা সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, অবিলম্বে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি সংসদে পাঠাবে। ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু জনগণের এখনও অধিকারের পুরোপুরি ফেরত দেওয়া হয়নি, জনগণের ভোটের অধিকার ফেরত দেওয়া হয়নি। আমরা সেটা দিতে চাই। বিএনপির এই নেতা বলেন, এত বড় একটি পরিবর্তনের পর স্বৈরাচার সরকার যেসব অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি করেছে তার বিচার অবিলম্বে চাই। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সব সেক্টর ধ্বংস করে গেছে শেখ হাসিনা। অনতিবিলম্বে সব সেক্টরে সংস্কার করতে হবে; যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, নিজের ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের রেখে বিদেশে পালাননি, কিন্তু শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের রেখে ভারতে পালিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার বিদেশে কোনো বাড়ি নাই, বিদেশে কোনো প্রভু নাই। মরলে এই দেশে মরব। বাঁচলে এই দেশে বাঁচব। আরেকজন তার নেতাকর্মীদের রেখে ভারতে চলে গিয়েছে। আবার বলেন চট করে দেশে চলে আসবেন। এই দেশের মানুষ আপনার অন্যায় ও হত্যার বিচার করবে। এই কয়েকদিন আওয়ামী লীগের কিছু চামচাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা যখন জেলে গিয়েছি বীরের মত জেলে গিয়েছি। বীরের মত জেল থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এদের কেন আদালতে জুতা মারে, ডিম মারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের বিএনপির নেতৃত্বের দীর্ঘ আন্দোলন ও ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে স্বৈরাচার সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। আমাদের বুঝতে হবে অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের মূল মেন্ডেন্ট। তা হলো দেশকে স্বৈরশাসকের জঞ্জাল পরিস্কার করতে হবে। আ.লীগের সব অন্যায়ের বিচার করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত গণতান্তিক সরকার ফিরে না আসে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে প্রমাণ করে বিএনপি গণতন্ত্রের দল। বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্রের ইতিহাস, বিএনপি ভোটাধিকার ফিরেয়ে ইতিহাস। আমরা আন্দোলনে ততক্ষণ থাকবো যতক্ষণ জনগণ তার মালিকানা ফিরিয়ে না পাবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ। চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন। এসময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিএনপি ও বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ডেল্টা টাইমস/সিআর/একে
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |