রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বাংলাদেশের অস্তিত্ব
মোজাফফর হোসেন ভূঁইয়া:
|
রাজনীতি মানেই সংকট, রাজনীতি মানেই সংকট দুরীকরনের পথ। রাজনীতিহীন দেশ মানব শুন্য বা বিশৃঙ্খল। আমরা অনেক ক্ষেত্রে শুনতে পাই কোন কোন মানুষ বলে থাকেন যে সে রাজনীতির ধার ধারেননা বা রাজনীতি বোঝন না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার মানষিকতা। এধরনের মনোভাব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারী হতে সহায়তা করে। আপনার পেশা যাই হোক না কেন আপনাকে অবশ্যই দেশের জাতীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। আপনার মূল্যবান নিরপেক্ষ মতামত পেশ করত হবে। দেশের সার্বিক শৃঙখলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আপনার মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি সৃষ্টি হতো না। এই স্বাধীনতার কথা হঠাৎ করে কারো মাথায় আসেনি বা কেউ হঠাৎ করে ঘোষনা দিয়ে দেশ স্বাধীন করে দেয়নি। এর পিছনে রয়েছে লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ। মানুষের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান হঠাৎ করে হয়ে উঠেনা। এর পিছনে থাকে হাজার গল্প কাহিনী। এই আন্দোলন আর ত্যগের মহান উৎসব যেন মানুষকে আন্দোলিত করে। স্বপ্ন জাগায় নতুন দিনের সন্ধানে। আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আজ স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পর সেই স্বাধীনতা বিরুধী চক্রের হাতে জিম্মি স্বাধীন সার্বভৌমত্ম বাংলাদেশ। এখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাধাঁ প্রদান করে এবার বাংলার ইতিহাসের খলনায়ক জিন্নার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। এমন হীনতা আমরা এর আগে কখনো কি দেখেছি? জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ তাদের ইডিওলোজিক্যাল দিক থেকে এখনো সেই পুরুনো মানষিকতাকে লালন করে আসছে বা তাদের ভবিষ্যৎ দর্শন প্রতিষ্ঠায় বা মানুষের চাওয়া পাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলার যে দর্শন প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন তা বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছে। আওয়ামী ও বিএনপির অপশাসন এর সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অভাবে বিএনপি টালমাটাল আচরণে লোভকে সংবরণ করতে ব্যার্থ হয়ে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে অস্থিত্ব মজবুতে অনেকটা ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি যার নিজস্ব কোন রং নেই। পাত্রবদলের খেলায় মগ্ন তাদের রাজনৈতিক আচরণ। তাদের নিয়ে এ বাংলা কোন স্বপ্ন দেখতে পারেনি আর কখনো পারবে না বলেই মনে হয়। উত্থানপতনের খেলায় বংলাদেশে একটি নতুন তরুন দলের আবির্ভব যা গণঅধিকার পরিষদ বলে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। আওয়ামী সরকারের আমলে ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিক উত্থান হলো এই দলটির। তবে তরুণ নেতৃত্বের এই সম্ভাবনাময় দলটি মানুষের দুয়ারে পৌছাতে এখন পর্যন্ত তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। বিরুপ মন্তব্য আর অনভিজ্ঞতার কারনে কিছু কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা পারফেক্ট কোন ইডিওলোজি মানুষের কাছে পৌচাতে পারেনি। তারা তাদের টার্গেট সমর্থক খোঁজে রাজনৈতিক দুরদর্শিতার পরিচয় দেখাতে পারেনি। এদিকে বৈষম্য বিরুধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একদল তরুণ ছাত্রের নতুন রাজনৈতিক কর্মসুচী প্রদানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের চেষ্ঠা করছে। এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমে স্বকীয়তা মানুষের চোখে পড়েনি। তাদের ইডিওলোজি অন্যদলের কার্যক্রমকে সমর্থন দিচ্ছে। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক ভাবাপন্ন নতুন কোন সুর জাগানোর সুযোগ নেই বললে ভূল হবে না। এখন কথা হলো তবে আমাদের এই সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ কী? সামনে তাহলে সরকার কারা হচ্ছে? রাজনৈতিক সমর্থন বিশ্লেষনে এটা অনভব করা যায় যে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের সমর্থণ অনেকটা এই রকম যে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসমর্থন রয়েছে প্রায় তেত্রিশ শতাংশ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থন প্রায় ত্রিশ শতাংশ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সমর্থন প্রায় সাত শতাংশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সমর্থন প্রায় সারে তিন শতাংশ আর অন্যান্য দলের মোট সমর্থন এক শতাংশ ধরা যায়। এখানে পচাঁত্তর শতাংশ মানুষের সমর্থন স্থায়ী বলে বিবেচনা করা যায়। বাকিঁ থাকে পচিঁশ শতাংশ, তার মধ্যে প্রায় পনের শত্াংশ মানুষ কোন রকম মতামত দিতে প্রস্তুত নয়, তারা বাম ডান কোন দিকে যেতে চায় না। বাঁিক যে দশ শতাংশ মানুষ পরিবর্তনশীল এবং তাদের বড় একটি অংশ খুব সচেতন এবং অপর অংশ লোভী যারা স্বার্থের টানে মতপ্রদান করে। এখন তরুণ ছাত্র সমাজ তাদের বিভক্ত মতবাদে কত শতাংশ সমর্থন আদায় করতে পারবে। এই হিসেবে সামনে সরকার গঠন করবে কারা? এখানে আপনার মতামতের সাথে যদি নিজেই মিলিয়ে ভাবেন তবেও ফলাফল প্রায় একই রকমের হবে। তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শাসন কার হাতে তুলে দিচ্ছি। তাদের শাসন কী আমাদের জন্য হবে নাকি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ আমাদের শোষন করবে? এর বৃত্ত বলয় থেকে বের হতে আমাদের কত বিপ্লবের সম্মোখীন হতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমান সময় কালে রাজনৈতিক সচেনতা খুবই প্রয়োজনীয়। দলান্ধতা ত্যাগ করে জাতিগত মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক মনোভাব পোষণ সমর্থন ও কাজ করা গুরুত্বপূর্ন। আপনি রাজনীতিকে অগ্রাহ্য করতে পারবেন না কারন আপনার সঠিক মতামতের উপর দাড়িঁয়ে আছে আপনার ভাবষ্যৎ, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ। আজ আপনার মতামতের উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও তার অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা। আমাদের সচেতন বিবেচনাবোধ সোনার বাংলা নির্মানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মানুষ তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবন কল্পনায় গড়ে তুলবে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ। আমরা এই বংলাদেশ প্রকৃতিগত ভাবে পাই নি। এই বাংলা এমনি এমনি করে তৈরি হয়নি। এই মানচিত্র কোন কল্পনাতে সৃষ্টি হয়নি। এই বাংলাদেশ কারো দানে পাওয়া নয়। আমরা লক্ষ প্রানের বিনিময়ে এই বংলাকে অর্জন করেছি। একটি স্বতন্ত্র আন্দোলনের ধারাবাহিক ফলাফল হলো এই বাংলাদেশ। এই ভূখন্ডের সৃষ্টি করা হয়নি বঙ্গবন্ধুর শহীদ দিবসকে বাধাঁ প্রদানের জন্য আর জিন্নার মৃত্যুর দিবসকে উৎযাপন করার জন্য। ইতিহাস বিকৃতির এক বিষবৃক্ষ রুপণ করার জন্য এই বাংলার জন্ম হয়নি। এমন স্পর্ধা আজ হৃদয়কে রক্তাক্ত করে। মনুষ্যত্বহীনতা রাজনীতিকে এমন এক ঘৃনার সৃষ্টি করেছে যে আমাদের দেশের ইতহিাস নিয়ে রংতামাশায় লিপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচারে অভাবে আজ দেশকে অপরাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট করে দেশকে গহীন আধাঁরে নিমজ্জিত করছে। এই সুজলা সুফলা সবুজ বাংলা আমাদের হৃদয়ের কথা বলে। আমরা এই মাঠ এই পথ রক্তগঙ্গার স্রোতে অর্জন করেছি। আমাদের এই বাংলার ভবিষ্যৎ কী? একটি কথা খুবই প্রচলিত যে ” গরীবের বউ সকলের ভাবি” এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি ভারতের ভাবি হবে ? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি হবো? আমাদের মাঝে কি ইউরুপ, চীন বা রাশিয়া এসে রাজত্ব করবে নাকি আমরা নিজেরাই আপন মহীমায় শির উচিয়ে থাকবো। ১৯৭১ সাল থেকে আজ ২০২৪ সালে এসে আমাদের ভাবতে হচ্ছে আমরা কি কোন দেশের ঔপনিবেশিক হয়ে পড়ছি কিনা। রাজনৈতিক মার প্যাঁচে আমাদের স্বাধীনতায় কখনো ভারত আবার কখনো যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেক বড় না হলেও এর ভৌগলিক অবস্থান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সবার নজর যেন আমাদের দিকে। আমরা এই কু-নজর উপেক্ষা করে কি টিকে থাকতে পারবো? বাংলাদেশের ভবিষ্যত বিবেচনা করতে গিয়ে আমি ভাবগত সমস্যায় পড়েছি। বর্তমান সময়ে রাজনেতিক পটপরিবর্তনের ধারায় দেশের জনগনের রাজনৈতিক জ্ঞান সীমাবদ্ধতা একটি বিরাট ঋণাত্বক ভূমিকা পালন করছে। আমরা কখনো কখনো ভাবতে পারছিনা যে আগামী দিনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি? গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থাপনা কোন রুপে আমাদের সামনে এসে হাজির হবে? আমরা কি কোন ধর্মনিরপেক্ষ দল পাব নাকি কোন মৌলবাদী দল পাব? আসলে কোন ইডিওলজির প্রতি কোন ধরনের সাইকোলজিক্যাল এলার্জি আমার নেই। আমি মূলত ভীত কারন আমরা এখ নপর্যন্ত কোন দেশপ্রেমিক শাসক পাইনি। কে কোন চেতনা নিয়ে বড় হচ্ছে তা আমাকে ভাবাচ্ছে না আমি চাই জনগনের সেবক কোন সুশাসক। এখানে আমি সুশাসক বলছি এই কারনে যে আমরা অদ্যবদি দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাইনি। বাংলাদেশের মানুষের মনস্তাত্বিক বিবেদের মূল কারন এখন পর্যন্ত সমাধানের সুযোগ হয়ে উঠেনি। এখানে মানুষের গণতাস্ত্রিক কাজের অসমতা এবং তাদের প্রতি অবিচার প্রবনতা থেকে এই ধরনের বিবেধগুলো পরিলক্ষিত হয়। নামে মাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতির রুপ মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলদের জবাব দিহিতার অভাব অঘোষিত সৈরতন্ত্রের সৃষ্টি করে থাকে। এই প্রতারনা মানুষকে যুগে যুগে সংগবদ্ধ করে। আন্দোলন এবং সহিংসতার জন্মনেয়। এর রুপ মানুষ দেখেছে জেনারেল এরশাদের পতন আন্দোলন, এর প্রতিরুপ দেখেছে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে দুষ্ট নির্বাচন, এর বাজে প্রভাব দেখেছে এক এগারো এর মতো সহিংসতা সবশেষে মানুষ দেখল ছাত্র জনতার বিপ্লব এবং শেখ হাসিনা সরকারের ধ্বংস। এত কিছু দেখার পরও আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিবেধ শেষ হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একই কায়দায় দেশ ধ্বংসের পায়তারায় লিপ্ত হলো বি এন পি -জামাত চক্র। তারা শুরূ করল হত্যা, খুন, রাহাজানি, হামলা, মামলা আর সাধারন মানুষদের হয়রানি। এই হয়রানি শুধু রাজনৈতিকতা থেকে সরে গিয়ে পৌছাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর। একদল ব্যস্ত হলো আর্থিক আয়ের প্রতি আরেকদল ব্যস্ত হলো শিক্ষক লাঞ্চনার কাজে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে দেশকে দেশের মানুষকে নরকের গহীন কোনে নিক্ষেপ করার পায়তারায় ব্যস্ত সকলে। আমরা কি এমন কিছুর জন্য এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছি? আমরা কি এমন অসভ্যতাকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছি ? আজ বিচারঞীনতায় কাঁদছে শিক্ষক, সাধারন মানুষ। এখানে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর বিষয় হলো মানুষকে তার নিরাপত্বাহীনতায় ভোগতে হচ্ছে। সংবাদপত্রের খবর গুলো শিউরে উঠার মতো। প্রতিদিন শত শত সাজা প্রাপ্ত আসামী মুক্তি পাচ্ছে। এখানে যেসব সন্তাসীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা ভবিষ্যৎ শান্তি বিনষ্টের বড় কারন হতে পারে। এগুলো যদি কোন হীন উদ্দেশ্যে করা হয় তবে তা ভয়ংকর থেকেও ভয়ংনকর রুপ নিতে পারে। এখানে ভবিষ্যৎ সার্বভৌমত্বের ঝুকিতে পড়তে পারে আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের যে সংকট ছিল এবং আছে তার হিংস্রতার রুপদেখানো এতটাই জটিল যে কোন ধরনের প্রাণির সাথে তুলনা করার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের বৈশিষ্ট বুঝতে পারি না। তাদের ভেজা বিড়াল স্বভাব আমাদের প্রতি পর্বেই বিপদে ঠেলে দেয়। নিয়ে যায় মহাসাগরের তলদেশে। সেই সাগর থেকে দেশের ছাত্র সমাজ টেনে তোলে দেশ গড়ার সুযোগ করে দেয় কিন্তু তাদের চরিত্র এতই নিকৃষ্ট যে ক্ষমতার আসনে বসা মাত্রই বেমালুম ভুলে যায় ভবিষ্যৎ পতনের নির্মমতা কি হতে পারে? আমরা প্রতিবার এমন আন্দোলনের প্রতিক্ষায় থাকতে পারি না। আমরা দেখছি প্রতিবার একজন সৈরশাসককে হটিয়ে তার প্রতিরুপ আরেক জনকে বসিয়ে দিচ্ছি। তিনি একই রুপে ফিরে আসেন । এমন রুপ আমাদের ভীত করে তুলে। আমাদের স্থায়ী পরিবর্তন দরকার কিন্তু সেই পরিবর্তনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমরা যেন কারো গোলামে পরিণত না হই। আমাদের অথনীতি, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা আমরাই পরিচালনা করব। কেউ যেন খবরদারি করতে না পারে। বাংলাদেশের ইতিহাস এখন বর্ননা করে বলার প্রয়োজন নেই । কোন গোষ্ঠি ইচ্ছা করলেই এই ইতিহাস বিকৃত করতে পারবে না। সুতরাং আমি ইতিহাস নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি দেশের ভূরাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমাদের নেতৃত্বে স্বকীয়তার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা আজ আমাদের জন্য ভয়ংকর হুমকী হয়ে দাড়িয়েছে। বৃহৎ জনগোষ্ঠি নিয়ে গড়ে ওঠা দলগুলো আজ তাকিয়ে থাকে ভারত বা আমেরিকার প্রতি। কারা কাকে আশির্ববাদ করে সরকার গঠনে সহায়তা করবে। এই আশির্বাদ পাওয়ার আশায় নিজেদের কোন স্বকীয় চিন্তা না করার যে ব্যার্থতা আজ আমাদের গ্রাস করেছে তা বিষ পান করে আত্মহত্যার সামিল। আমি ভারত বিদ্ধেসী ন ইবা আমেরিকা বিদ্ধেসী নই। আমি আমার স্বকীয়তাকে জাগাতে চাই। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা আমরাই নির্ধারন করবো। আমাদের চেতনা আমরাই গড়বো আমাদের মতো থাকবে আমাদের সমাজ। কারো কতৃত্ব আমরা পছন্দ করি না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইতিহাস পর্যলোচনা করলে আমাদের দৈন্যতা এমন ভাবে চোখে ভাসে যেন সত্যিই আমরা গরীবের বউ। পাকিস্তান থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক স্থিাতশীলতা পাই নি। বাংলাদেশের রুপকার বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছে তা তেপ্পান্ন বছরের মাঝামাঝিতেও কাজ করছে। এর মাঝে যা ঘটেছে তা দেশকে যুগের পর যুগ পিছিয়ে দিয়েছে। নেতৃত্বেও অদুরদর্শিতা পরিবার তন্ত্রের প্রভাব, গনতন্ত্রের অকার্যকর ব্যবস্থাপনা দেশের মানুষের অনিশ্চিত জীবন দান করেছে। সেই অনিশ্চয়তার গ্যাড়াকলে আজও নিমজ্জিত আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি ভারতের কলোনি থেকে বাচঁতে গিয়ে আমেরিকার কলোনি হয়ে পড়ছিনাতে? এখানে কলোনি বলতে আমেরিকার বা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শাসন করাকে বোঝানো হচ্ছে না। তারা আমাদের দেশকে দখল করবে না। কিন্তু তাদের অদৃশ্য ইশারায় আমাদের রাজনীতি ও অর্থনিিত পরিচালিত হবে। তাদের দেখানো নীতি বাস্তবায়ন করে একরকম অঘোষিত গোলাম বানিয়ে রাখবে। আমরা বরাবরের মতো আশাবাদী। সামনের সময় জনগনের হতে আসবে তাই কামনা করি। এখানে জনগনের হাত বলতে আঠার কোটি মানুষকে বুঝিয়েছি। আঠার কোটি চেতনাকে বুঝিয়েছি। চেতনা বা ঈড়হংপরড়ঁংহবংং সব সময় বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত থাকে। আমাদের দেশে যে ধরনের চেতনা লক্ষ্য করা যায় তার মাঝে রয়েছে – ধর্মনিরপেক্ষতা, মৌলবাদিতা, জাতীয়বাদীতা ইত্যাদি। প্রতিটি চেতনাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। চেতনাকে আঘাত কওে নির্মূল করা যায় না। বিচার বিশ্লেষণ ও সরলতার মাধ্যমে পরিবর্তন বা শীতীল করা যায়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল গুলো এতই নির্বোধ ও হিংস্র যে তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের কথা ভুলে যায়। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার আসনে থাকার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে। এই মাষিক বিকৃতি প্রতিপক্ষ সাময়িক সমস্যায় পড়ল্ওে দিনে দিনে আরো শক্তিশালী রুপ নিয়ে আবির্ভুত হয়। আর তখন দেশ হয় অস্থিতিশীল এবং মানুষ অর্থনৈতিক, সামজিক, রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপড়। রাজনীতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার সফলতায় দেশ সফল যার ব্যর্থতায় দেশ ধ্বংস। তাই দেশকে বাচাঁতে চাইলে রাজনীতি পড়ুন, বুঝুন ও সঠিক মতামত পেশ করুন। আমরা চাই নৈতিক রাজনৈতিক পলিসি। আমাদের গঠনতন্ত্র হবে স্বকীয়। আমরা আইনের শাসনের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। এই জন্য আমাদের করনীয় ঠিক করতে হবে। আন্তঃরজিনেতিক পলিসি নির্ধারন করে সুফল গণতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। বিজ্ঞান ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রীতি নীতি বাস্তবায়ন ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের বিপ্লবী রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে কয়েক ধরনের সংকটকে সংগায়িত করা যায়। এর মধ্যে পুজিঁবাদতন্ত্রের অবস্থা, প্রকৃতির উপড় খবরদারি , নৈতিকতার সংকট, সহনশীলতার অভাব, সর্বোপরি মনুষ্যত্বের সংকট যা মহা সংকটে রুপ ধারণ করেছে। আমাদের এই সংকট সমুহকে সংশোধন করতে হলে প্রথমেই সচেতন হতে হবে। মানবিকতাকে ধারন করে রাজনৈতিক চেতনাকে সংগঠিত করতে হবে। বিনষ্ট রাজনীতির যে মনোভাব রয়েছে তা থেকে সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগনকে বের করে সুষ্ঠ পরিবেশ দিতে হবে। রাজনীতির শুদ্ধাচারে অভাবে দেশে মূলত বিনষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে। রাজনীতির যে মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তা বোঝে শোনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে সুস্থ ধারা তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক রাজতৈক ভাবের যে সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে তা থেকে উঠে আসার এখনি প্রয়োজন। রাজনীতির সাথে দশনের যে সংকট রয়েছে তা থেকে বের হতে হলে প্রয়োজন শুদ্ধাচার ও সমযোতা। বাংলাদেশ শুরু থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক আমলাতান্ত্রিক ভাবনা দ্বারা পরিচালিত। আমাদের চিন্তাধারা প্রভাবিত হয় গেজেটবিত্তিক। স্বাধীনতা যুদ্ধেও মাধ্যমে ভুখন্ড পেয়েছি কিন্তু স্বতন্ত্র বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। স্বতন্ত্র বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কীধরনের প্রভাব রাখতে হবে তা বুঝতে বুঝতে অর্ধশত বছর পার করে আজও স্বাধীনতার খোঁজে দৌড়াতে হয়। আমরা কুটনৈতিক সম্পর্কের বাইরে বন্ধুত্ব গড়তে চাই। আমাদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে তাদের আর্শিবাদে ক্ষমতার আসন চাই। যা দেখাচ্ছে আওয়ামিলীগ, বিএসপি, জামায়াত অন্যদের কথা আর কী বলবো? আমরা মুক্তির নেশার খোজে যুদ্ধ করি। কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারিনা। আমরা আসলে বুঝিনা আমাদের মুক্তি কিসে আসে। আমাদের মুক্তি মানে কি শুধু আত্মউন্নয়ন? আমাদের মুক্তির মানে কি প্রতিহিংসা? আমরা কি স্বার্থপরতায় মুক্তি পাব? হাজার হাজার কোটি টাকায় কি আমাদের মুক্তি সম্ভব? এধরনের প্রশ্নগুলো আনেকের কাছে হস্যকর আবার অনেকের কাছে বিশ্ময়কর। আমদের সমাজের আর্থিক ব্যকস্থাপনা এমন ভাবে অনিয়মের তালায় বন্দী যা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এমন এক বিষময় পরিস্থিতি থেকে বাচঁতেই মুলত আমাদের এই ছাত্রজনতার মহাবিপ্লব। এই বিপ্লবকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতেই মুলত ক্ষমতা লিপ্সু একদল দখল বানিজ্যে লিপ্ত। ধ্বংস আর চেতনার মাঝে বিষবৃক্ষ রুপনের পায়তারায় ব্যস্ত । এই বিষ বৃক্ষ আবার নতুন কোন বিপ্লবের সুযোগ করে দিতে পারে। আর সেই বিপ্লব আবার সহিংসতাকে বাড়িয়ে দিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সকলে সাবধান থেকে সবাইকে নিয়ে সুন্দর সমাজ সৃষ্টির কাজে এগিয়ে যেতে হবে। লেখক : কথা সাহিত্যিক |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |