নারী কোটা চাই না, নারীরা অগ্রসর: খুবি ছাত্রীরা
সানজিদা আক্তার, খুবি:
|
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এক চমৎকার ঘোষণা কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলনে নতুন মোড় এনেছে। "আমাদের কোটার প্রয়োজন নেই!" এই স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তারা সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কোটা প্রথা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকে মনে করেন, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য এই ব্যবস্থা প্রয়োজন। আবার অনেকে মনে করেন, এটি মেধার সুযোগ কেড়ে নেয় এবং বৈষম্যকে আরও তীব্র করে তোলে। এই ঘোষণার মাধ্যমে নারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তারা আর কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য কোটার উপর নির্ভরশীল থাকতে চান না। তারা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান অধিকার ও সুযোগ চান। এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের খায়রুন নাহার বলেন, মূলত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতায় আনার জন্যই কোটা পদ্ধতি প্রচলিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের অবস্থা বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নে নারী কোটা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রতিবন্ধী কোটা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য কোটার প্রচলন ছিল। তবে বর্তমানে দেশে প্রতিবন্ধী কোটা এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ছাড়া আর কোন কোটার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। যেখানে আজ আমি নারী পুরুষ সমান অধিকারে বিশ্বাসী সেখানে 'নারী কোটা' নামক শব্দ আমার জন্য অসম্মানজনক। আমার বিশ্বাস নারীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে সমাজে তাদের অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবে এর জন্য আলাদা করে কোন কোটার প্রয়োজন নেই। পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের নির্ঝর বলেন, একটা সেরা জায়গায় থাকা উচিত একটা সেরা মানুষের, যে কিনা এই হাজার পরীক্ষার্থীদের সাথে মেধা এবং পরিশ্রমের লড়াইয়ে জিতবেন। কিন্তু কোটা থাকার ফলে এই সেরা জায়গাগুলাতে অযোগ্য মানুষেরা যাচ্ছেন। একজন পরীক্ষার্থী যদি সেরা হয়, তাহলে তার কোটার প্রয়োজন হয় না। এদিকে ৫৬% কোটার জন্য আমরা যারা এতদিন নিজেদের মেধার উপরে ভরসা করে আছি, আমরা বুঝতে পারি যে আসলে আমার চেয়ে কম পরিশ্রমী একজন মানুষও এগিয়ে যেতে পারবে কারণ তার কোটা আছে। তাই এই দেশে আমি যতই চেষ্টা করি, কেউ না কেউ এসে তাদের পূর্ব প্রজন্মের ভাব দেখিয়ে সেই জায়গা নিয়ে নিবে, যা আমি একজন নাগরিক হিসেবে কোনভাবেই চাইনা।আমি এমনকি নারী কোটারও বিরুদ্ধে, আমরা এখন এমন প্রজন্মে বাস করছি যেখানে নারী চাইলে সব পারে। তাই তার চেষ্টাকে "ও তো নারী কোটায় আসছে" বলে দাবিয়ে না দেই। শুধু প্রতিবন্ধী কোটা বাদে কোন কোটা না থাকুক, কোটার পরিবর্তে মেধা হোক আমাদের এগিয়ে যাবার হাতিয়ার এই কামনা করি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সিথী রানী বলেন, নারী কোটা থাকা সত্বেও আমরা আন্দোলনে নেমেছি। কারণ আমরা চাই শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী কোটা বাদে সব ধরনের কোটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশে থেকে বিলুপ্ত হোক। সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সাদিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এটা সত্যি যে তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা এই দেশটাকে পেয়েছি। আবার স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেও সুযোগের সমতার কথা উল্লেখ আছে। প্রয়োজনে এই বীরদের সুযোগ-সুবিধা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে বংশ পরম্পরায় নাতি-নাতনি পর্যন্ত কোটা কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করা, তবে তা যেন যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব না ফেলে।ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি কোটা দেওয়ার দরকার হলে পিছিয়ে পড়া মানুষ বা প্রতিবন্ধীদের দেওয়া হোক এবং এসব দিক চিন্তা করে সামগ্রিক কোটা কোন ভাবেই ১০% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। মেধাকে মূল্যায়নের জন্য এর বিকল্প কোনো উপায় নেই। ডেল্টা টাইমস/সানজিদা আক্তার/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |