ব্যাংকে পাঁচশ টাকা, হাতে বঙ্গবন্ধুর নৌকা
ভোটযুদ্ধে গণমানুষের নেতা রশীদুজ্জামান
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক :
|
ব্যাংকে জমা আছে পাঁচশ’, হাতে নগদ দুই লক্ষ টাকা। তা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বঙ্গবন্ধু’র ‘নৌকা’ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তার নির্বাচনী প্রচারণা, বিশেষ করে পোস্টারিং, মাইকিং, জনগণের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা সবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ খরচে করছেন দলীয় নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্খী ও সাধারণ জনগণ। হ্যাঁ বলছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানের কথা। কে কোথা থেকে কিভাবে নির্বাচনের জন্য খরচ করছে, সেসবের হিসেব নেই প্রার্থীর কাছে। নিজের কাজ ফেলে, পকেটের অর্থ খরচ করে দলের নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্খী, এমনকি এলাকার সাধারণ জনগণ নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তাদের একটাই আকাঙ্খা, বঞ্চনার শিকার পাইকগাছা-কয়রাবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে গরীব-মেহনতি মানুষের প্রতিনিধি রশীদুজ্জামানকে সংসদে পাঠাতে হবে। এবারের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনী হলফনামায় অঢেল সম্পদের হিসেব এখন আলোচনায়। কোন কোন প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনা, জমা দেওয়া, শো-ডাউন, আপ্যায়ন বাবদ প্রার্থীদের খরচ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নির্বাচনী খরচ তো সামনে বাকী। এই অবস্থায় নৌকা মার্কার প্রার্থী রশীদুজ্জামানের হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদের হিসেবে চোখ আটকে যায়। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা যেখানে কোটি কোটি টাকার মালিক, সেখানে রশীদুজ্জামানের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এরমধ্যে কৃষি খাত থেকে বছরে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় করেন দুই লাখ ৮৮ হাজার টাকা। একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের সন্তান মো. রশীদুজ্জামানের ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ৫০০টাকা। হাতে আছে, নগদ দুই লাখ টাকা। সম্পদের মধ্যে দশমিক ৬৬ একর কৃষি জমি, দশমিক ২৪ একর অকৃষি জমি, একটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। তার স্ত্রীর রয়েছে, তিন দশমিক ছয় একর কৃষি জমি এবং দশমিক ২২ একর অকৃষি জমি। তার স্ত্রী পেশায় একজন শিক্ষক। যার বার্ষিক আয় চার লাখ ৩২ হাজার টাকা। তিন কন্যা উচ্চ শিক্ষিত। সম্প্রতি অফিসের কাজেই ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে পাইকগাছা-কয়রা গিয়েছিলাম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে, তাই ওই এলাকায় কে কোন দলের প্রার্থী, কার জনপ্রিয়তা কেমন- এমন প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে ছিলোই। কয়রার মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাটে নির্দিষ্ট কর্মসূচি শেষে জানতে পারি, মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের সভা চলছে। যেখানে নৌকার প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানও আছেন। গিয়েছিলাম দেখার জন্য। দলীয় নেতা-কর্মী, ছাত্র-যুবকসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষও সমবেত হয়েছে। এতো মানুষের ভিড়ে সেদিন প্রার্থীর সাথে কথা বলা হয়নি। পরদিন পাইকগাছা উপজেলা সদরে হাজারো নেতা-কর্মী বেষ্ঠিত প্রার্থীর সাথে কথা বলার সুযোগ হলো। প্রসঙ্গত, বলে রাখতে চাই, আগের দিন কয়রা যাওয়া আসার পথে ঈদ কিংবা পূজা, অন্য কোন জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে রশীদুজ্জামানের একটা পোস্টার, প্যানা-ব্যানার কিছুই চোখে পড়লো না। অন্য কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর এধরনের পোস্টার ফেস্টুন বেশ দেখতে পেলাম। এই বিষয়ে জানতে চাইলে, পাশ থেকেই স্থানীয় এক চা দোকানদার জানালেন, রশীদ ভাই বরাবরই প্রচার বিমুখ মানুষ। তিনি কাজ করেন নিরবে নিভৃতে। এলাকার সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় কাজ করে যাচ্ছেন। বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তারপরও জনগণের পাশে আছেন। পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান দীর্ঘ দিন দলের মধ্যে প্রায় কোনঠাসা হয়েছিলেন। তবে দলের জন্য ছিলেন, নিবেদিত। পদ-পদবীর জন্য অপেক্ষায় না থেকে দীর্ঘদিন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন আওয়ামী রাজনীতির এই ত্যাগী নেতা। সেটা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তার মনোনয়নের খবরে নির্বাচনী এলাকার জনমনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে। সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে তো অনেক খরচ, অথচ আপনার ব্যাংকে আছে মাত্র ৫০০ টাকা। কিভাবে খরচ নির্বাহ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাভাব সুলভ মুখে স্মিত হাসি টেনে দৃঢ়তার সাথে রশীদুজ্জামান বললেন, নির্বাচনে আমার টাকা কখনও লাগে না। এর আগেও একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি, জনগণ ভোট দিয়েছে- জিতেছি। আমার আশপাশের মানুষ, জনগণ স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করেছে। এবারেও বললে বিশ্বাস করবেন, কিনা জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে কোন টাকা খরচ হয়নি। শুধুমাত্র দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য স্ত্রীর চাকরি থেকে ব্যাংকে জমানো অর্থ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এরপর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা দেওয়াসহ অন্যান্য খরচ, সবই করেছে দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্খীরা। নোনা মাটির খাটি নেতা রশীদুজ্জামান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, নেত্রীর দেওয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে যেদিন এলাকায় ফিরেছিলাম, সেদিন নির্বাচনী এলাকায় রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের উৎসাহে অপেক্ষা করেছে। এতো মানুষ যে, আমাকে বহনকারি গাড়িটি তাদের পায়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাধ্য হয়েছে। এভাবে পাইকগাছা আওয়ামী লীগ অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে পারিনি। এবার গলা ভরাট হয়ে এলো এই গণমানুষের নেতার। ভিজে উঠলো চোখের কোণ। ধরা গলায় বললেন, জীবনে মানুষের এই ভালোবাসাই, আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ, সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে, তাদের প্রতিনিধি হয়ে, তাদের কথা বলতেই আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটে সকলের কাছে ভোট প্রার্থনা করছি। আমি বিশ্বাস করি এই পাইকগাছা-কয়রার জনগণ আমাকে বিমুখ করবে না। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আবারো বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করবে তারা। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন, আজীবন ত্যাগী নেতা রশীদুজ্জামান। সেই ছাত্র জীবন থেকে গণমানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার আছি। আশির দশক থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী ও অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন শুরু করি। তখন ব্যাপক মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে। বারবার পুলিশ ও প্রভাবশালী মহলের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কয়েকবার জেলও খেটেছি। ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেও সেই বিজয় ছিনিয়ে নেয় তৎকালীণ স্বৈরশাসক এরশাদের প্রার্থী। ২০০১ সালের পর তৎকালীণ ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোটের অবর্ণনীয় নির্যাতন ও হয়রানি শিকার হয় আমার গোটা পরিবার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ডজনখানেক মিথ্যা মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যামিনী সরকার বলেন, রশীদুজ্জামান এলাকার পরীক্ষিত নেতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সয়ম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যেমন করেছেন, তেমনি নিজ এলাকায় কৃষকদের জমি লবণ পানি মুক্ত রাখার জন্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন সহ্য ও বহু মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। দিনের পর দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু সেই আন্দোলন সফল হয়েছে। আক্রান্ত সেই সকল এলাকায় এখন ধান, তরমুজ ও সবজি চাষ করে এলাকার জনগণ ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। ফলে এই আসনে নৌকা বিজয়ী হবে নিশ্চিত। এলাকাবাসী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে এলাকায় ফিরে রাজনীতিতে সময় দেওয়ার জন্য চাকরির প্রত্যাশা করিনি সাহসী তরুণ নেতা রশীদুজ্জামান। এলাকায় পড়ে থেকে রাজনীতি ও সামাজিক কাজেই সময় দিয়েছেন তিনি। খুঁজে খুঁজে অনেক সম্ভাবনাময় যুবকদের সংগঠিত করে দলে সম্পৃক্ত করেছেন। যে কারণে অতীতে ওই আসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বর্তমানের চিত্র উল্টো। জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রার্থীরা যেকোনো নির্বাচনে বিজয়ী হন। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |