এলজিইডির সড়ক নির্মাণে বাধা, চাঁদা আদায়ের কৌশল মামলাবাজি
নিজস্ব প্রতিবেদক
|
পল্লি অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব অবকাঠামোর অবদান অপরিসীম। গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু এরকম একটি সড়ক পাকা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে এলজিইডি। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আওতাধীন এলখাল গ্রামে এমনটি ঘটে। দেশব্যাপী যেখানে সড়ক পাকা করতে চেষ্টা তদবির চলে সেখানে উন্নয়নকাজে বাধা দিতে খোদ এলজিইডিসহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে একটি চক্র। পাশাপাশি হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। উদ্দেশ্য সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত করা। বর্তমান সরকারের ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ এর আওতায় ‘এলখাল মমিন মার্কেট টু এলখাল মোল্লাবাড়ি ভায়া সালাম হাজীর বাড়ি’ পর্যন্ত ৯০০ মিটার সড়ক পাকা করতে বাধা দিচ্ছে এ চক্রটি। রাস্তা পাকাকরণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এলজিইডিসহ স্থানীয় মানুষকে ওই মামলায় বিবাদী করা হয়। এরপর গত ২৩ অক্টোবর মুরাদনগর সহকারী জজের আদালতের রায় আসে রাস্তার পক্ষে। ইনজাংশনের আবেদন নাকচ করেন আদালত। এরপর গত ১৪ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তারা ঘটনার সত্যতা পান। সরকারি কাজে বাধাদানে বিরত থাকতে এদের অনুরোধ করেন তারা। আদালতের রায়ে হেরে যাওয়ার পরও রাস্তার পক্ষে ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এ চক্রটি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী রহমান জাহিদ বলেছেন, ‘এ ধরনের ইনজাংশনের আবেদন করা মামলা নাকচ হলে নতুন করে স্ট্যাটাস ক্যু অথবা ইনজাংশন না দিলে কাজ চালিয়ে নিতে কোনো আইনি বাধা নেই’।
গ্রামবাসী জানান, রাস্তার কাজ বন্ধ রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে ‘মামলা বাছির’ সিন্ডিকেট। এসব অপকর্মের নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি। তাতে রাজি না হওয়ায় এলজিইডিসহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ এসেছে। মামলাবাজ এ চক্রটি গ্রামবাসীর নামে এ পর্যন্ত প্রায় ১০টি মামলা করেছে। এরমধ্যে ৫টি মামলা ইতিমধ্যে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে আদালতের রায়ে। বাকি মামলা চলমান। এরা বিভিন্ন সময়ে সর্ব সাধারণের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা মামলা করে। হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করায় বাছিরের নাম হয়েছে ‘মামলা বাছির’। তার সহযোগী হিসাবে আছে আশ্রাফ উদ্দিন। এ বিষয়ে ৫নং পূর্বধইর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর প্রাণের দাবি রাস্তাটি পাকা করা হোক। অন্তত ২৫ বছর ধরে মাটির এ সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। মাঠ পর্যায়ে সার্ভেসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তিন বছর পর ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি সড়কটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার; রোড আইডি নম্বর ৪১৯৮১৫৩০৬। এরকম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পাকাকররেণ বাধা দিচ্ছে একটি মামলাবাজ চক্র। সরকারি কাজে বাধা না দিতে ইউএনও, থানার ওসিসহ আমরা সবাই অনুরোধ করেছি ওদের। কিন্তু ক্ষান্ত হয়নি। পরে জানতে পারি, ওদের বাধার নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি। তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে ওরা তিন লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। কিন্তু চাঁদার কথাটি প্রকাশ্যে না বলে মিথ্যা মামলা করে তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও রাস্তার জন্য কাউকে চাঁদা দিতে রাজি হওয়ার কারণ নেই। সরকার উন্নয়ন করতে চায় সেখানে বাধা দেওয়া বেআইনি। স্থানীয়রা জানান, এলজিইডি সাধারণত জমি অধিগ্রহণ করে না। ব্যক্তি মালিকানাধীন পথ চলাচলের সড়ক স্থানীয়দের দাবি বা চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পাকা করে সংস্থাটি। উন্নয়নকাজে বাধা দিতে গিয়ে পুরোনো সড়কটি নিজের মালিকানাধীন দাবি করে মামলা করেছিল বাছির গং। অথচ ওই রাস্তাটি মসজিদের সড়কের নামে ওয়াকফকৃত যা দাতার দলিলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তথাপি আদালতের নির্দেশে সিভিল কমিশনার সরেজমিন পরিদর্শন করে ড্রোনের মাধ্যমে ছবি তুলে আদালতে জমা দেন রাস্তার বাস্তব চিত্র। এরপরই কোর্টের রায়ে বাছির গংয়ের অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সরকারের একটি উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা দুঃখজনক। এতে করে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের সড়ক পাকা করতে আগ্রহ হারাবে এলজিইডি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত মামলা বাছিরের বক্তব্য নিতে গেলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। টানা তিন দিন এলখালে তার আস্তানা এবং বাড়িতে গিয়েও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। একাধিক আইনজীবী জানান, সরকারি কর্মচারীকে কাজ সম্পাদনে বাধাদানের বিষয়ে দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সরকারি কর্মচারীদের সরকারি কার্যাবলী সম্পাদনে ইচ্ছাপূর্বক বাধা দান করে, তবে সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা পাঁচশত টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমাণ অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’ সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য সম্পাদনে বাধা দানের উদ্দেশ্যে আক্রমণ অথবা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করার বিষয়ে দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারায় তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, এমনকি উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডেল্টা টাইমস/সিআর/জেএইচ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |