বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৫ চৈত্র ১৪২৯

ঢাকার দূষণের কারন, দূষণ রোধে করণীয়
মোঃ মাজহারুল ইসলাম সৈকত
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

.

.

ঢাকার দূষণ কমাতে সমন্বিত পরিকল্পনার পাশাপাশি জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যম বায়ু। আর সেই বায়ু যদি দূষিত হয় তাহলে বাঁচার উপায় কি? বায়ু দূষনের কারনে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, "বায়ু দূষণের কারনে বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যু বরন করেন। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়"। এমতাবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ৩১৫ নিয়ে শীর্ষস্থান ঢাকার যা অতি বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। এর আগে ভারতের দিল্লি প্রথমে থাকলেও এবার দিল্লিকে টপকে প্রথম ঢাকা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে মাত্র ৬১(একিউআই) স্কোর নিয়ে ৩১ নম্বরে ছিল সেখানে ২০২৩ সালের শুরুতেই তালিকার ১নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা। এর পিছনে অবশ্য কারন শুষ্ক মৌসুম, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলেই বাতাসের দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, "বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে"। বায়ু দূষণ একেবারে বন্ধ করা কখনোই সম্ভব নয়, কিন্তু দূষণ কমানোর জন্য করার অনেক কিছুই আছে। দূষণ কমানোর জন্য সবার আগে দূষণের কারন চিহ্নিত করতে হবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হল- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো"। তাহলে কি আমরা এই তিনটিকে(ইটভাটা, নির্মাণ কাজ, যানবাহন) বন্ধ করে দিব? তা তাতো আর করা যাবেনা যা করতে হবে তা হলো এই ৩টি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা।

প্রথমেই ইটের ভাটার কথা বলা যাক, ঢাকা শহরে যেসকল ইটের ভাটা সমূহ রয়েছে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, কিছু ঢাকার উত্তর প্রান্তে কিছু দক্ষিণ প্রান্তে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাতে তেমন সমস্যা ছিলনা, সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের ঋতু এমন যে ৬ মাস উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়বাকি ৬ মাস দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যার কারনে ইটের ভাটার দূষিত ধোঁয়া ঘুরে ফিরে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরেই ঢুকছে। যদি ঢাকা শহরের ইটের ভাটার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হতো যেখান থেকে শহরে দূষিত বাতাস ঢুকতে না পারে তাহলে শহরের দূষণ অনেকটা কমানো যেত। ইটের ভাটায় চাইলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দূষণ কমানো যায়। কি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাটা চালালে দূষিত কালো ধোঁয়া বন্ধ করা যায় তা মেনে চলছেনা অনেক ভাটা এতে দূষনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে ভাটা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। বিশ্বের অনেক দেশেই ইটের ভাটা নেই তারা সিমেন্টর ব্লক তৈরি করে ইটের বিকল্প ব্যবহার করে। আমাদের দেশেও চাইলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় এতে দূষণ অনেকটাই কমে যাবে।

ঢাকা শহরে যেই সকল যানবাহন চলাচল করে তার বেশীরভাগের ফিটনেস ঠিক নেই। আর যার মধ্যে বেশীর ভাগই পুরাতন ফিটনেসবিহীন ইঞ্জিন দিয়ে চালায়। যার কারনে সেইসব ইঞ্জিন থেকে কালোধোঁয়ার পরিমাণ ও বেশী হয়। তাই প্রথমেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। ঢাকা শহরের যানবাহন কমাতে হবে, একই সাথে আধুনিক প্রযুক্তির জ্বালানি ব্যবহার করেও দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব। বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন বাড়িয়ে জ্বালানি চালিত যানবাহন কমানো গেলে দূষণ ও কমবে। ইলেকট্রনিক গাড়ি কিংবা মেট্রোরেলের মত যানবাহন।

নির্মাণ সাইটের ধূলিকণা বায়ুদূষণের অন্যতম কারন। প্রথমেই জানা প্রয়োজন কিভাবে এই দূষণ হয়। নির্মাণকাজ দুই ধরনের হয় সরকারি নির্মাণকাজ, ব্যাক্তিগত নির্মাণকাজ। সরকারি নির্মাণ কাজের মধ্যে সাধারণত রাস্তার কাজ গুলো থেকে বেশী দূষণ ছড়ায়। একটি ড্রেইনের কাজ বা রাস্তার কাজ বছরের পর বছর চলতে থাকলে দূষণও বাড়ে। বেশী সমস্যা হয় রাস্তার কাজ একপাশে চলে অন্য পাশ দিয়ে যানবাহন চলে যেখান থেকে ধূলিকণা চারিদিকে সহজেই বাতাসের সাথে মিশে যেতে থাকে। ড্রেইনের গর্ত খুঁড়ে পাশেই মাটি স্তুপ করে রাখা হয়, সেখান থেকে যানবাহনের বাতাসে বালি ছড়িয়ে পড়ে বায়ুতে। এই অবস্থা থেকে বাচার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাজ করা উচিৎ। ব্যাক্তিগত নির্মাণ কাজ থেকেও বেশী দূষণ হচ্ছে বর্তমানে। একটি দালান উঠবে সেখানে রাস্তার পাশে বালি রাখা হয়, ঢেকে রাখা হয়না নির্মাণ সামগ্রী, যেখান থেকে বাতাস এলে সেই বালি বাতাসের সাথে মিশে বায়ুকে দূষিত করছে। শুধু তাই নয় একটি নির্দিষ্ট সাইটের কাজ শুরু করার আগে পর্যাপ্ত পরিমানে ঢাকনার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে নির্দিষ্ট এরিয়ার বাহিরে একটি বালিকণা ও বাহিরে না যায়।

সিটি করপোরেশন আরো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ  নিতে হবে। উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। জনজীবন কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উন্নয়ন কাজের কোনো মানেই হয়না। সিটি এলাকায় কোনো নির্মাণ কাজ পরিবেশের ক্ষতি করছে কিনা নিয়মিত নজরদারিতে রাখতে হবে। কোথাও কেউ আইন অমান্য করলে ব্যাবস্থা নিতে হবে। রাতের বেলা সিটি করপোরেশন এর পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাস্তা পরিস্কার করার সময় অনেক বেশী ধূলিকণা বাতাসের সাথে মিশে যায়, কারন তারা ঝাড়ু দেয়ার সময় পানি ছিটায় না। সিটি করপোরেশনের উচিত পানি ছিটানো বাধ্যতামূলক করা এতে বায়ুদূষণ কমবে। সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত পরিমানে ডাস্টবিন রাখতে হবে সব জায়গায় যাতে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায়। কলকারখানার বজ্য অপসারণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমেই বায়ু দূষণ বেশী হয় সুতারং এই মৌসুমে দিনে রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে ধূলিকণা বাতাসে মিশতে পারবেনা বায়ুদূষণ কমবে।

বায়ুদূষণ রোধে জনসাধারণের সচেতনতার বিকল্প নেই। আইন মানার ইচ্ছা না থাকলে শত আইন করেও অপরাধ বন্ধ করা যায়না। ধরুণ, রাস্তার পাশে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন রাখা আছে কিন্তু আপনি কলা খেয়ে খোসা ঠিকি বাহিরে ফেললেন বিষয়টি এমন। যত কিছুই করুক জনসচেতনতা সবার আগে প্রয়োজন। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু একটু করে সচেতন হলে আমার আপনার শহর রক্ষা পাবে, রক্ষা পাবে মানুষ।



লেখক: দপ্তর সম্পাদক, পরিবেশ ক্লাব বাংলাদেশ, ফেনী সরকারি কলেজ শাখা।



ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com