শীতকালীন স্বাস্থ্য সংবেদনশীলতার সমাধান সঠিক জীবনচর্চা
আনিকা তাসনিম সুপ্তি:
|
![]() শীতকালীন স্বাস্থ্য সংবেদনশীলতার সমাধান সঠিক জীবনচর্চা শীতকালীন সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা- গলা ব্যথা ও কাশি : গলা খুসখুস করা, ঠাণ্ডাতে কাশি হওয়া থেকে শুরু করে রাতে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো সমস্যা হয়। গরম ভাঁপ নিলে বা গড়গড়া করলে এবং ঠাণ্ডা এড়িয়ে চললে অনেক সময় এর সমাধান পাওয়া যায়। অ্যালার্জি : শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বক ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে অনেক সময় তীব্র শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কোল্ড বা ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা ছাড়াও শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। নাক দিয়ে রক্ত ঝরা : শীতকালে বাতাস শুকনো হয়ে যায়, বাচ্চারা বারবার নাকে হাত দেয়, সর্দি হলে বারবার নাক মোছে বলে এমন সমস্যা হয়। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে অভিভাবকদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। টনসিল সমস্যা : শীতের হিম বাতাসে টনসিল গ্রন্থির ক্ষতি হয় ফলে তাতে প্রদাহ হয়ে ফুলে ওঠে, গলা ব্যথা, ঢোঁক গিলতে অসুবিধা হয়। টনসিল গ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস দ্বারা ইনফেকশন হয়, প্রচন্ড ব্যথা হয় আবার এতে পুঁজও হয়। ঠাণ্ডা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। মশাবাহিত রোগ : শীতকালে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা ভাইরাস জ্বরের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসা, বারবার জ্বর আসা, গিঁটে ব্যথা ইত্যাদির লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মলত্যাগ সমস্যা : হঠাৎ করে ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের, অনেক সময় বড়দেরও পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যখন বেশি ঠাণ্ডা পড়ে, তখন বয়স্কদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এই সমস্যা এড়াতে বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া উচিত। সাইনোসাইটিস : সাইনোসাইটিস হলো সাইনাস গ্রন্থিগুলিতে শ্লেষ্মা জমে বাতাস চলাচলের রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। ফলে শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি বন্ধ নাক, মাথাব্যথা, চোখব্যথা, মুখ ফুলে যাওয়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, গলার স্বর পরিবর্তন ইত্যাদি কষ্টকর যন্ত্রণা ভোগ করেন। স্নায়ুরোগ : শীতের সময় হাত পা ঠান্ডা অবস্থায় রক্ত চলাচল কম হয়। এতে নার্ভ ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও রক্তশূন্যতার রোগী ও বৃদ্ধ মানুষরাও শীতে নার্ভের জটিলতায় ভুগে থাকেন। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগালে নার্ভের পাশাপাশি মাংসপেশি এবং হাঁড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নার্ভ, হাঁড় এবং মাংসপেশির নানান অসুখ হয়। টিনিটাস : শীতে ঠাণ্ডা লেগে নাক, কান এবং গলার প্রদাহ থেকে টিনিটাস নামক একটি কষ্টকর সমস্যা সৃষ্টি হয় অনেকেরই। এতে আক্রান্ত কানে অনবরত বাঁশির মত শব্দ হতে থাকে। স্বাস্থ্য সচেতনতার উপযোগী খাদ্যতালিকা শীতে মৌসুমি শাকসবজি বা ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কিছু উপকারী শীতকালীন সবজি- ফুলকপি : ফুলকপিতে রয়েছে ভিটমিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে যা কিডনির পাথর ও ক্যান্সার নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। বাঁধাকপি : বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও ফাইবার, যা শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে এবং ওজন কমায়, আলসার প্রতিরোধে ভালো কাজ করে। ব্রোকলি : ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান, রাতকানা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। গাজর : গাজর সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, এর বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদান অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ধনিয়াপাতা : ধনিয়াপাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, এ, কে ও ফলিক এসিড রয়েছে, যা ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। টমেটো : টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, ভিটামিন-সি, যা মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। স্কার্ভি ও চর্মরোগ প্রতিরোধ করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। মটরশুঁটি : শীতকালীন সবজি মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি; প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫ কিলোক্যালরি। শিম : শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রক্তে কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে, লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে। পালং শাক : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, আয়রন ও ফলিক এসিড, যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি। মূলা : মুলা বিভিন্ন ক্যান্সার, কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধে সাহায্য করে মুলা। এর মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি দূর করে। শরীরের ওজন হ্রাস করে আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। শীতকালে নিজেকে সুস্থ রাখতে বেশি করে খেতে হয় টকজাতীয় ফল যেমন- কমলালেবু : বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কমলালেবু সর্দি-কাশি এবং নানা সংক্রমণ বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়াই করে, হজম শক্তি বাড়ায়। জলপাই- এর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং সি শীতকালীন ঠান্ডা লাগা, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো সমস্যা তাড়াতে ভীষণ কার্যকরী। এটি বাতের ব্যথা, হাঁপানি উপশম করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। আমলকী- চুল থেকে ত্বক যত্নে রাখতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকী সত্যিই ভীষণ কার্যকরী। শীতকালে রোজকার ডায়েটে একটি করে আমলকী রাখলে তা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বেদানা- শীতকালে রসালো ফল বেদানা পুষ্টির ভালো উৎস। এতে আছে প্রচুর খনিজ, অ্যামাইনো এসিড, ফলিক এসিড, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ প্রভৃতি পুষ্টি উপাদান। এটি দাঁত, হাড় ও ত্বক সুরক্ষিত রাখতে, হার্ট ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কুল- কুলে আছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা প্রয়োজনীয় উপাদান। ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া ইত্যাদি দূর করে, ক্যান্সার কোষ, টিউমার কোষ ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে। শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতায় জীবনচর্চার কিছু ধরণ- ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-সি গ্রহণ প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটার মধ্যে অন্তত বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট শরীরে রোদ লাগালে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ হয় যা শীতের অতি প্রয়োজন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি হাঁড়, দাঁত ইত্যাদি মজবুত থাকবে। ভিটামিন সি শরীরের জমা থাকে না বলে প্রতিদিনই এই ভিটামিন গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পানীয় : আদা পানি, তুলসী চা, লেবু-মধুর উষ্ণ পানি, গরম মসলার চা, তেজপাতা চা সহ ঔষধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন হারবাল টি শীতের সময় দিনে তিন থেকে চার কাপ খেলে শরীর রোগমুক্ত থাকতে সাহায্য করে, বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। ভাপ নেওয়া : শীতের সময় সাইনোসাইটিসসহ সর্দি, হাঁচি-কাশির সমস্যায় খুবই কার্যকরি হাইড্রোথেরাপি হলো ভাপ নেওয়া। গরম পানিতে দুই টুকরা মেনথল বা সামান্য লবঙ্গ, গোলমরিচ মিশিয়ে ভাপ নিলে সাইনাসের শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে সর্দি আকারে বের হয়ে আসে এবং সাইনাস ক্লিয়ার হয়ে যায়, শ্বাস নিতে আরাম হয়। বাষ্প স্নান : শীতের সময় মাঝেমধ্যে বাষ্প স্নান নিলে রোমকূপ খুলে যায় এবং শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে বর্জ্য বের হয়ে আসে। আর শরীর সতেজ আর বর্জ্যমুক্ত হওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ বা জয়েন্টের সমস্যায়ও এটি উপকারি। লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়৷ ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |