জিপিএ ৫ নয়, লক্ষ্য হোক মনুষ্যত্ব অর্জন
অলোক আচার্য:
|
![]() . যাদের সন্তান সামান্য পয়েন্টের জন্য এ প্লাস বা গোল্ডেন এ প্লাস পায়নি তারা হতাশ। কিন্তু তাদের হতাশ হওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। নিজের সন্তানকে বোঝাতে হবে যে এই গ্রেড পাওয়াই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। প্রতিযোগীতা ভালো। তবে তা জীবনের বিনিময়ে অবশ্যই নয়। এই প্রতিযোগীতার চিন্তা তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভালো মানুষ হতে উৎসাহ দিতে হবে। আজ ফল খারাপ হয়েছে তবে ভালো করার সুযোগও তো আছে। সবাই চাই কেবল পাসের হারে বৃদ্ধি না বরং মেধার হারে বৃদ্ধি ঘটুক। মেধাবী শিক্ষার্থী যাচাইয়ে যদি পাসের হার কমে তাহলে একটুও আফসোস নেই। কারণ কয়েকজন নামমাত্র শিক্ষিত বেকার যুবকের চেয়ে একজন প্রকৃত মেধাবী দরকার। কারণ সেই একজন বাকিদের কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখে। সফলতা এবং ব্যর্থতা- জীবনের এই দুটি দিক গ্রহণের মানসিকতা থাকা উচিত। প্রকৃতপক্ষে সঠিক মূল্যায়ন বলতে সেই পরিমাপ কতটা সঠিক তা বলা যায় না। কারণ আজকাল বিভিন্ন পদ্ধতি বারবার পরিবর্তন করা হয়। পরীক্ষা মানে পাশ আর ফেল। যারা পাশ করছে তারা নিঃসন্দেহে মেধাবী। কিন্তু যারা পাশ করছে না তারা কি মেধা শূণ্য? কোন একটা বা দুইটা বিষয়ে ফেল করলেই কি তার মেধা নেই বলা যেতে পারে? শুধু ফলাফল দিয়ে নিশ্চয়ই কোন ছাত্রছাত্রীর মেধা পরীক্ষা করা যায় না। কারণ স্কুল কলেজের পাশ ফেল শুধু সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে স্কুলে ছাত্র হিসেবে খুব খারাপ হয়ে পরবর্তী জীবনে বড় বড় ব্যাক্তিদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। এবং এই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। তাহলে পাশ ফেল এবং মেধা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও স¤পূর্ণ নির্ভর নয়। যে শিক্ষা মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আজকাল যেন সেই মূল লক্ষ কেবল সার্টিফিকেট। কোনমতে একটা সার্টিফিকেট পেলেই সব শেষ। তারপর এদিক সেদিক ধরাধরি করে একটা চাকরি বাগিয়ে সমাজে দিব্বি মেধাবী সেজে ঘুরে বেড়ানো যায়। একসময় দেশে পরীক্ষায় নকল করার একটা প্রবণতা ছিল। তখন পাসের হারও কম ছিল। কিন্তু সবাই নকল করতে পারতো না। তবে আশ্চর্যের বিষয় কিন্তু সেটা নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো সেসময় পরীক্ষার কেন্দ্রে অসুদপায় অবলম্বন করলেও শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতো না। কে পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল করেছে সে বিষয়টার স্বাক্ষী কেবল আরেক পরীক্ষার্থী থেকে যেত। আজ কেন্দ্রের সামনে লেখা থাকে নকলমুক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র। তবে শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কেন? একটু গ্রেড কম পেলে বা গোল্ডেন এ প্লাস না পেলেই জীবনে সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। হতাশার কিছু নেই। বরং অন্য কোন বিষয়ে তার আগ্রহ আছে ধরে নিতে হবে। জীবনের সাফল্য ব্যর্থতা নির্ভর করে মনুষ্যত্ব অর্জনে। একজন সৎ সাধারণ মানুষ একজন দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসারের চেয়ে দেশের জন্য প্রয়োজন বেশি। আর তাই যারা পরীক্ষায় ফেল করেছে বা আশানুরূপ ফল করতে পারে নি তারা যেন সব শেষ হয়ে গেছে এটা মনে না করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সঙ্গ দিতে পারে সন্তানের অভিভাবক। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীই প্রয়োজন। পাসের হার বৃদ্ধি করে আপাত শিক্ষার প্রসার হলেও মান না বাড়লে স্থায়ী ক্ষতি হয়। তাই আমরা চাই আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় মেধার বিকাশ ঘটুক। শেষ পর্যন্ত যদি কোন ছাত্রছাত্রী পাস না করতে পারে তার জন্য প্রচলিত সংস্কৃতি অনুসারে তার ফেল করার কারণ উদঘাটন করতে ব্যাস্ত না হয়ে তাকে বোঝানো যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তো সে অবশ্যই জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। জীবন যুদ্ধের পরীক্ষার মত কঠিন পরীক্ষা আর কি আছে। নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব এসব লেখাপড়ার রেজাল্ট দিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এটা দিতে পারছে না। এ কারণেই চারদিকে দুর্নীতির বীজ। জিপিএ ফাইভ নিয়ে পাশ করাটাকে আমরা যত সহজে প্রচার করি ফেল করাটাকে গ্রহণ করার মন মানসিকতা আজও গড়ে ওঠেনি। যারা পাশ করতে পারেনি বা যারা এ প্লাস পায়নি তাদের সকলের জন্য রইলো শুভকামনা। প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট, পাবনা। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |