কাগজের টাকা থেকে ইলেকট্রনিক মানি
মেহেদী হাসান নাঈম:
|
![]() কাগজের টাকা থেকে ইলেকট্রনিক মানি মুদ্রার প্রচলন হওয়া পূর্বে মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য পশু শিকার ও প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন দ্রব্য সংগ্রহ করত। কিন্তু তাতে সব প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হত না। কেউ পশু শিকারে দক্ষ হলেও অস্ত্র বানাতে পারত না। আবার কেউ অস্ত্র বানাতে পারলেও শিকার করতে পারত না। ফলে শুরু হয় পরস্পর সহযোগীতা। যে ভাল শিকার করতে পারতো তাকে অস্ত্র দেওয়া হত, বিনিময়ে সে পশু দিত। এই বিনিময় প্রথাকে বার্টার সিস্টেম বলা হয়। এতে অস্ত্র দাতাকে যে পশু দেওয়া হত তা দিয়ে সে সন্তুষ্ট হত না। ফলে শুরু হয় অসামঞ্জসতা। দরকার হয় সাধরণ বিনিময় মাধ্যমের। বিনিময় প্রথার আরও কিছু সমস্যা ছিল। যার মধ্য অন্যতম মূল্য জমা বা স্থানান্তর করা যেত না। একসময় বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কালক্রমে প্রচলন হয় দুস্প্রাপ্য শামুক, ঝিনুক ও বিভিন্ন ধরণের কড়ি। তারও অনেক পর আসে সোনা ও রুপার মুদ্রা। মানুষের কাছে যখন অনেক সোনা জমা হত, নিরাপত্তার জন্য তারা ঐ সময়ের স্বর্ণকার ও মহাজনদের কাছে জমা রাখত। প্রমাণ হিসেবে পেত কাগজের রশিদ। স্থানান্তর ও বহন জনিত কারণে মানুষ ঐ রশিদ ব্যবহার শুরু করে। যার বর্ধিত রুপ হচ্ছে কাগজি মুদ্রা। মূলত সুইডেনের স্টকহোম ব্যাংক প্রথম কাগজী মুদ্রাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তারপর থেকে সাধারন বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার কারণ সহজে বহন যোগ্য, লেনদেনের সহজ মাধ্যম ও মূল্য মজুত যোগ্য। কাগজের মুদ্রা সর্বপ্রথম তৈরি করা হয় ৭০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দে চীনে। তবে এই মুদ্রা বেশি দিন লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিরাজ করতে পারে নি। ১৪৫৫ সালের পরেই বন্ধ হয়ে যায় এই টাকার ব্যবহার। ১৫শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীন আবার তার ধাতব মুদ্রায় ফিরে যায় এবং পরবর্তীতে আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই মুদ্রা। হাজার বছরের বিবর্তনের ফলে যে কাগজের মুদ্রা আমরা ব্যবহার করছি তার রূপগত অনেকটা পরির্বতন এসেছে। আধুনিকায়নের এই যুগে সারা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য পরিমান লেনদেন হয় অনলাইন প্রক্রিয়ায়। যেখানে শুধুমাত্র কয়েকটি অংক স্থানান্তরের মাধ্যমে লেনদেন সম্ভব। যেখানে কোন কাগজি মুদ্রার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সকল প্রকার লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। উন্নত বিশ্বে পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় বেশি ভাগ মানুষ অনলাইন লেনদেন করতে চায়। তার যথেষ্ট কারণও আছে। একজন সপ্তহে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা লেনদেন করতে পারে বর্ধিত এই মাধ্যমটিতে। যে কোন জায়গায় বসে লেনদেন সম্পর্ণ করা যায়। সম্প্রতি ইউ.এস.এ এর একটি গবেষণায় দেখা যায় শতকরা ৭৫ জন লোক অনলাইন লেনদেন করতে আগ্রহী। অপরদিকে, ইউ.এস.এ আইডি কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রকাশিত অন্য এক গবেষণায় দেখা যায় অনলাইন লেনদেনের সংখ্যা ২০১৩ সালে ১০ মিলিয়ন থেকে ৭৭ মিলিয়নে পোঁছায়। যেখানে ২ বছরে লেনদেন বৃদ্ধি পায় ৬৭ মিলিয়ন। এমন অবাক করা তথ্য থেকে এটাই পরিস্কার বুঝা যায় কাগজী মুদ্রার ব্যবহার আগামী কয়েক বছরের মধ্য নাটকীয় ভাবে হ্রাস পাবে। প্রতিবেদনটিতে আরও উঠে আসে ৭৭ শতাংশ মানুষ তাদের বিল পরিশোধের জন্য অনলাইনকে বেঁচে নেয়। স্কুলের বেতন প্রদান করতে ৬০ শতাংশ লোক অনলাইন পছন্দ করে। একদিকে যেমন গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ছে, অন্য দিকে অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহও অনেকটা আগুনে ঘি ঢালছে। অধিক গ্রাহক ও মুনাফার আশায় তারা তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। যা মানুষকে কাগজী মুদ্রার ব্যবহার থেকে মুখ ফিরিয়ে অনলাইনে লেনদেন করতে আহ্বান করছে। সবকিছু ছাপিয়ে আধুনিক এই মাধ্যমে বড় রকমের হুমকিও যে আছে তা ভুলে গেলে চলবে না। হ্যাক বা সাইবার ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। হতে হবে আরো দক্ষ। এই তো কিছূ দিন আগে দেশের একটি দেশের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম সারা দিন কাজ করছিল না। দিনভর দেশের লক্ষ কোটি গ্রহক ভুগেছে অনিশ্চয়তায়। দেশের প্রথম সাড়ির জাতীয় গণমাধ্যম সময় টেলিভিশনে দেশ সেরা আইটি এক্সপার্ট থাকার পরও যদি ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হবার ঘটনা আমাদের নতুন ভাবে সর্তকতার বার্তা দেয়। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বিনিময় মাধ্যমের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তা নিঃসন্ধেহে গ্রাহকদের জন্য শুভকর। তবে দরকার সচেতনতা আর সরকারের কঠোর নজরদারি। লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী ,সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |