শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে
আমজাদ হোসেন
প্রকাশ: সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ২:৪৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

.

.

কয়েক বছর ধরেই বায়ু দূষণে নাকাল রাজধানীবাসী।ধীরে ধীরে এ সমস্যা রাজধানী ঢাকাকে ছাড়িয়ে বিভাগীয় ও জেলা শহর গুলোতেও  ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।একটি শার্ট-প্যান্ট পড়ে অফিসে গেলে পরদিন আর সেই শার্ট-প্যান্ট পড়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। শার্ট-প্যান্ট যায় যাক কিন্তু প্রতিদিন যে কি পরিমাণ দূষিত বায়ুর সাথে বিভিন্ন জীবানু আমাদের শরীরে যাচ্ছে তার হিসেব করা খুবই দূরুহ ব্যাপার।

বায়ু দূষণ বলতে সাধারণত আমারা বুঝি যখন বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা ও ক্ষুদ্র অণু অধিক অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায় । তখন এটি বিভিন্ন রোগ, অ্যালার্জি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও এটা অন্যান্য জীবন্ত বস্তু যেমন- পশুপাখি, ফসল ইত্যাদির ক্ষতি করে। দুষিত বায়ু সুস্থ পরিবেশের জন্য বাধা। ২০১৪ সালের WHO এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বায়ু দূষণে প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে সারি সারি ইটভাটা।এমনকি কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ের পাশেও গড়ে উঠেছে এসব ভাটা।এসব ভাটা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া।অন্যদিকে রাজধানীতে চলছে মেট্রোরেলসহ নানা নির্মাণকাজ।আর যানজট তো আমাদের  নিত্যদিনের সঙ্গী। এসব কারণে রাজধানীর বায়ু দূষণ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, দিনে ২টি সিগারেট খেলে মানবদেহের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিদিন সেই পরিমাণ ক্ষতির শিকার হন নগরবাসী। বিশেষ করে নবজাতক থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ষাটোর্ধ্বরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।

এ ছাড়া প্রতিনিয়তই বাড়ছে হাঁচি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট। এসবের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বছরে গড়ে জিডিপির ক্ষতি প্রায় সাড়ে চার শতাংশ।

বায়ুদূষণের মূল উপাদানসমূহ এবং তাদের প্রধান উৎস সমূহ হচ্ছে, কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2)- পরিবেশের নেসেসারি ইভিল এই গ্যাসীয় উপাদানের অতিরিক্ত উপস্থিতি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মূলত গ্রিনহাউজ এফেক্টের ফলে এটি হয়ে থাকে। কলকারখানা, যানবাহন-ই এই গ্যাসের প্রধান উৎস।

কার্বন মোনো-অক্সাইড (CO)- মানুষের শ্বাসক্রিয়ার পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটাতে পারদর্শী। মূলতঃ পুরনো যানবাহনের থেকে এই গ্যাসের উৎপত্তি। এই কারণে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলীতে বিভিন্ন দূষণ-নিয়ন্ত্রণজনিত বিধি লাগু করা হয়েছে। ইউরো স্টেজ এবং ভারত স্টেজ (ইঞ্জিন-এর রেটিং ব্যবস্থা) এই ধরনের দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2)- ট্যানারি এবং অন্যান্য কলকারখানার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ার অন্যতম মূল উপাদান হল এই SO2গ্যাস। বাতাসের ভাসমান জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে গিয়ে এই গ্যাস অতি ক্ষতিকারক অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। মানুষের ক্ষতির পাশাপাশি তাজমহলের মতো মার্বেল-নির্মিত সৌধের-ও অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়েছে এর কারণে।

ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন (CFC)- মূলতঃ পুরোনো এয়ার কন্ডিশনার এবং বাণিজ্যিক সিলিন্ডার এর উৎস। পৃথিবীর ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোন স্তর লঘুকরণের অন্যতম উপাদান এটি। কিন্তু বর্তমানে এই গ্যাস ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হয়েছে প্রায় সব দেশেই। প্রকৃতপক্ষে, এই ফ্লুরো কার্বন পরিবারের কোনো গ্যাস-ই আর তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।

অন্যান্য- সোনার কারখানাতে ব্যবহৃত নাইট্রিক অ্যাসিড জনিত গ্যাস যেমন নাইট্রোজেন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি, প্রায় সব কারখানাতেই ব্যবহৃত সালফারের যৌগ, ক্লোরিনের যৌগ ইত্যাদি থেকে উদ্ভুত গ্যাসগুলিও বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসাবে পরিগণিত করা যেতে পারে।তবে বর্তমানে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে বায়ুদূষণ বৃদ্ধির হারে লাগাম পরানো গেছে।

SPM(Suspended Particulate Matter)- এটি ধোঁয়া-ধুলো বা এরোসল হতে পারে।যানবহন বা জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়ার মধ্যে যে কার্বন কণা থাকে ,তার আকার ১০ ন্যানোমিটার থেকে কম হয়। এগুলি বাতাসে ভেসে থাকে এবং বাতাসে মধ্যে কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।এটি একটি বিশেষ কারণ।

গেল বছর বিশ্বের ১১৭টি দেশ, ৬ হাজার ৪৭৫টি অঞ্চল এবং স্থলভিত্তিক বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে বায়ু দূষণ ডেটার ওপর ভিত্তি করে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল তাতে দেখা যায়, ২০২১ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল এমন তালিকায় ১১৭ দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এরপরই রয়েছে চাদ। তৃতীয়স্থানে রয়েছে পাকিস্তান, চতুর্থস্থানে রয়েছে তাজিকিস্তান। আর পঞ্চমস্থানে রয়েছে ভারত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি দেশও ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি।২০২১ সালে ডব্লিউএইচও তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন পরিবর্তন করে। সেসময় সংস্থাটি জানায়, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এর চেয়ে কম ঘনত্বও উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।

অথচ আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন বলছে, তাদের সমীক্ষার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শহরের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শহরের বাতাসে ডব্লিউএইচও প্রত্যাশিত বায়ুমান পাওয়া গেছে। আর ৯৩টি শহরে পিএম২.৫ এর মাত্রা ছিল ওই গ্রহণযোগ্য মাত্রার ১০ গুণ বেশি।এর মধ্যে বাংলাদেশের বাতাসে পিএম২.৫ এর গড় পরিমাণ ছিল ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা সমীক্ষার ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই হিসেবে গতবছর বিশ্বে বাংলাদেশের বাতাসই ছিল সবচেয়ে দূষিত।

এছাড়া, ৭টি দেশে এই পরিমাণ ছিল ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান তালিকার তৃতীয় (৬৬ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম) এবং ভারত তালিকার পঞ্চম (৫৮ দশমিক এক মাইক্রোগ্রাম) অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ২৮তম। এ শহরে পিএম২.৫ এর গড় পরিমাণ ৭৮ দশমিক এক মাইক্রোগ্রাম। ঢাকায় দূষণ তুলনামূলক কম হওয়ার বড় কারণ ছিল গতবছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মহামারির লকডাউন। তবে রাজধানী শহরগুলোর ভেতরে ঢাকা আছে দিল্লির পর দ্বিতীয় অবস্থানে।

প্রসঙ্গত, আইকিউএয়ার ২০১৮ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ আসছে। এর মধ্যে প্রতিবারই বাংলাদেশ দূষিত দেশের তালিকায় প্রথম দিকে থাকছে।প্রতিবেদন বলছে, সবচেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৪৬টিই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার। এছাড়া ২০২১ সালে চীনে বায়ুর গুণমান উন্নত হয়েছে।

বায়ু দূষণে করণীয় 

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা শহর অস্বাভাবিক বা জরুরি পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং এ সময় আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারি। সরকার নিম্নলিখিত কৌশল গ্রহণ করতে পারে, যা এ মুহূর্তে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ তীব্র আকার ধারণ করে। সুতরাং দূষণ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য উন্নত মানের মাক্স ব্যবহার করা ব্যক্তির জন্য একটি অস্থায়ী সমাধান হতে পারে। তবে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাধ্যতামূলক। ঢাকা শহরে প্রতি শীত মৌসুমে ওয়াসা, কেবল নেটওয়ার্ক কোম্পানি, গ্যাস সাপ্লাই কোম্পানি ইত্যাদি তাদের সেবা সংস্কারের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। যদি সব সংস্থা তাদের সংস্কারকাজের জন্য রাস্তা খননে একীকরণ প্রক্রিয়া বজায় রাখে তবে এটি নির্মাণ কার্যক্রম থেকে দূষণ হ্রাস করতে পারে। এছাড়া রাস্তা নির্মাণ বা খনন কাজগুলো নিয়মকানুন ও আইন মেনে করা হচ্ছে কিনা, সেদিকে সরকারকে অবশ্যই নজরদারি করতে হবে। সেক্ষেত্রে যেসব স্থানে নির্মাণকাজ চলমান সেসব স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে এবং রাজধানী শহরে বালি, মাটি বা নির্মাণসামগ্রী পরিবহনকারী ট্রাকগুলো যেন ঢেকে নেয়া হয়, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চে দিনে দুবার সড়কে পানি দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের বেশকিছুসংখ্যক পানি ছিটানো যানবাহন রয়েছে। তাই ঢাকা শহরের ধুলাবালি সাময়িকভাবে কমাতে সরকার শীত মৌসুমে রাস্তায় ধুলা কমানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে পারে। সরকার সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করতে পারে যে প্রতিটি ভবনের কর্তৃপক্ষকে তাদের ভবনের সামনের রাস্তায় প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর নিজ উদ্যোগে পানি ছিটাতে অনুরোধ করতে পারে। আর এ কাজে বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ এসি থেকে তৈরি পানি ব্যবহার করতে পারে। ঢাকা শহরে তিন লাখের বেশি এসি ব্যবহার করা হয়। তথ্যানুযায়ী ঘনীভবনের কারণে দুই টন ধারণক্ষমতার একটি এসি উপজাত হিসেবে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় কমপক্ষে দুই লিটার পানি উৎপাদন করে, যা নিজ আঙিনায় দূষণ রোধে কাজে লাগানো যেতে পারে।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। অতএব মেয়াদোত্তীর্ণ ও কম ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং কালো ধোঁয়া নির্গত যানবাহন আটক করা বায়ুদূষণ রোধে একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। এক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৬ অনুযায়ী বিভিন্ন গাড়ি বা যানবাহন যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও কম ফিটনেসবিহীন সেগুলো রাজধানীর রাস্তায় চালানো সীমিত করলে দূষণের মাত্রা কমতে পারে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে গাড়ির জোড় ও বিজোড় নম্বরপ্লেট অনুযায়ী অসম ড্রাইভিং বা বিকল্প দিনের চলাচল প্রবর্তন করা যেতে পারে।

লাইসেন্স ছাড়া চলমান সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় টায়ার পোড়ানো হয় এবং ব্যবহূত লিড অ্যাসিড ব্যাটারি (ইউল্যাব) কারখানাগুলো ঢাকার বায়ুকে দূষিত করছে। তাই দূষণের মাত্রা কমাতে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের পাশাপাশি রাস্তার পাশে বর্জ্য পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশনকে উন্মুক্ত বর্জ্য ফেলার পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি বস্তি এলাকায় উন্নত রান্নার চুলা ও মানসম্পন্ন জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ শহর এলাকায় বায়ুর গুণগত মান উন্নত করতে অবদান রাখবে।

ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ সমস্যা হ্রাস করার জন্য সরকার মধ্যমেয়াদি কিছু কৌশল নিতে পারে, যা ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা যেতে পারে। এর মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার ও রাস্তার ধুলা সংগ্রহের জন্য ম্যানুয়াল ঝাড়ুর পরিবর্তে সাকশন ট্রাক ও ভ্যাকুয়াম সুইপিং ট্রাকের প্রচলন করতে পারে। রাস্তার ধুলা থেকে দূষণ কমাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঢাকা শহরের বসবাসের জন্য আরো পৃথক সাইকেল লেন বাধ্যতামূলককরণ দূষণের মাত্রা কমানোর অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ হবে। শহর এলাকায় সঠিক বৃক্ষরোপণ ও ছাদে বাগান করার জন্য উৎসাহিত করা বায়ুমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, এলাকাভিত্তিক ভূপৃষ্ঠের জলাধারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।যেখানে বেশি সবুজ ও জলাধার রয়েছে, সেখানে বায়ুর গুণগত মানের একটি স্পষ্ট উন্নতি দেখা গেছে। যেমন ঢাকার ভেতরে তৃপ্তি, পিলখানা ও রমনা এলাকার বায়ুমান তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে যেখানে জলাধার নেই সেই এলাকাগুলো থেকে। অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে ঘরের অভ্যন্তরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত যান্ত্রিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ইট তৈরিতে উন্নত প্রযুক্তি চালু করা উচিত। প্রত্যেকটি জেলা শহরে নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়া বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেয়ার প্রচলন করতে হবে।

সরকারের উচিত দেশের এনজিও, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে একটি প্লাটফর্মে যুক্ত করে পৃথক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। তবে সরকারেরও একার পক্ষে কিছু করার থকবে না। এক্ষেত্রে  জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সঠিক দিকনির্দেশনা, জ্ঞান ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে জনসাধারণকে ঢাকা শহরের বায়ু ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করা যেতে পারে।
 



লেখক: কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।


ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com