শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপানি ছোট মেয়ে একদিন বাবার কাছে, একদিন মায়ের কাছে থাকবে
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:২৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

জাপানি ছোট মেয়ে একদিন বাবার কাছে, একদিন মায়ের কাছে থাকবে

জাপানি ছোট মেয়ে একদিন বাবার কাছে, একদিন মায়ের কাছে থাকবে

জাপানি দুই শিশুর মধ্যে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা আগে থেকেই ছিলেন মায়ের কাছে। আরেক শিশু লায়লা লিনাও মায়ের কাছে থাকবে বলে রায় দেন পারিবারিক আদালত। তবে ছোট মেয়ে লায়লা ছিল বাবার কাছে। অভিযোগ করা হয় বাবা জোর করে ছোট মেয়েকে কাছে রেখেছেন। তবে বাবার পক্ষে বলা হয় ছোট মেয়ে তার কাছে থাকতে চায়।

এমন ঘটনায় মেয়ে কার কাছে থাকবে এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত বলেন আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাপানি ছোট শিশু লায়লা লিনা একদিন বাবার কাছে, একদিন মায়ের কাছে থাকবে। তবে এসময় ছোট শিশুকে বাবার গলা জড়িয়ে কান্না করতে দেখা যায়। বাবার কাছে থাকতে চান বলে জানান।

এদিকে শুনানিতে মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আদালত রায় দিয়েছেন দুই শিশু মায়ের কাছে থাকবে। এতে তাদের মঙ্গল হবে। কিন্তু বাবা জোর করে ছোট মেয়েকে কাছে রেখেছেন। এছাড়া তিনি পলাতক ছিলেন।

অন্যদিকে শুনানিতে বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে আইনজীবী নাছিমা আক্তার বলেন, ছোট মেয়ে লায়লা লিনা বাবার কাছে থাকতে চায়। দরকার হলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। পারিবারিক আদালত যে রায় দিয়েছেন তার বিপক্ষে উচ্চ আদালতে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হয়েছে। এ আপিলের বিষয়ে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি হবে। যেহেতু মেয়ে বাবার কাছে থাকতে চায় ও আদালতে মামলাটির আপিল রয়েছে। সেটা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে বাবার কাছে থাক। আমরা আদালতে মুচলেকা দিব। কোর্ট যখন চাইবেন মেয়েকে হাজির করা হবে। মেয়েটি কাঁদছে। একটি শিশুকে টানা হেঁচড়া করে আরেকজনের কাছে দেয়া মানবিক কারণে ঠিক হবে না। কারণ মেয়ে অন্য কারো কাছে নয়, তার নিজের বাবার কাছে থাকতে চায়।

এছাড়া ছোট মেয়ে নিয়ে পলাতক থাকার বিষয়ে বাবার পক্ষে নাছিমা আক্তার বলেন, বাবা বাচ্চা নিয়ে নিজের বাসাই ছিলেন। মেইল করে মায়ের আইনজীবীর কাছে এ তথ্যও জানানো হয়। তবুও ছড়ানো হলো বাবা বাচ্চা নিয়ে পলাতক। এরপর বিচারক জাপানি ছোট শিশু লায়লা লিনার বক্তব্য শোনেন।

এদিন বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে আদালতে আসেন মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। অন্যদিকে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে ছোট মেয়ে নায়লা লিনা উপস্থিত হন।

সকালে জাপানী বংশোদ্ভুত ছোট শিশু লায়লা লিনা সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার বাবার কাছে থাকতে চাই। আমার বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসে। মায়ের কাছে যেতে চাই না।

এসময় বাবা ইমরান শরীফ বলেন, লায়লা লিনা আমার কাছে থাকতে চাই। মায়ের কাছে যাবে না। কিন্তু ওর মা ওর ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করছে ওকে নিয়ে যেতে। কিন্তু ও যেতে রাজি না।

এরআগে গত ২৯ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান বাবা ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে জাপানী বংশোদ্ভুত ওই দুই শিশু মায়ের জিম্মায় থাকবে মর্মে রায় দেন। এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বাবা ইমরান শরীফ। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ আপিল করা হয়।

উল্লেখ্য, মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

এরপর ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো।

পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।

এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে। এদিকে সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে সন্তানদের বাবা ইমরান শরিফ গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলাও করেন।



ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com